মূল্যায়ন পদ্ধতি নিয়ে অভিভাবকদের সমালোচনার বিষয়ে অধ্যাপক মশিউজ্জামান বলেন, “শিক্ষা কোনো অভিভাবকের দাবির বিষয় নয়।“
নতুন শিক্ষাক্রমের মূল্যায়ন
পদ্ধতির পক্ষে-বিপক্ষে আলোচনা থাকলেও পুরনো পরীক্ষা পদ্ধতিতে যেতে চায় না জাতীয় শিক্ষাক্রম
ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ড (এনসিটিবি)।
শিক্ষাক্রম বাস্তবায়নের
দায়িত্বে থাকা সরকারি এ সংস্থার নীতি নির্ধারণী পর্যায়ের কর্মকর্তারা বলছেন, নতুন শিক্ষাক্রম
যোগ্যতাভিত্তিক শিক্ষার একটি পদ্ধতি। এতে লিখিত পরীক্ষা দিয়ে মূল্যায়নের সুযোগ নেই।
তারা বলছেন, এ শিক্ষাক্রমে
পাবলিক পরীক্ষা কোন পদ্ধতিতে নেওয়া হবে তা ঠিক করতে এখন বৈঠক করছেন তারা। এতে আগের
মত লিখিত পরীক্ষা বিবেচনায় আনা হচ্ছে না।
সেই বৈঠকের অংশ হিসেবে
শনিবার শিক্ষা বোর্ডগুলোর চেয়ারম্যান ও বিশেষজ্ঞদের সঙ্গে মতবিনিময় করে এনসিটিবি বলে
জানান সংস্থার সদস্য (শিক্ষাক্রম) অধ্যাপক মশিউজ্জামান।
তিনি বলেন, “নতুন কারিকুলামে
পাবলিক পরীক্ষাটা কীভাবে নেওয়া হবে, সে বিষয়ে আমরা আলোচনা করেছি। যেন পরীক্ষার ডিজাইনটা
আমরা চূড়ান্ত করতে পারি।”
তবে মূল্যায়নের ক্ষেত্রে
‘পুরনো ধাঁচের’ পরীক্ষা পদ্ধতি কিছুতেই ফিরে আসবে না জানিয়ে অধ্যাপক মশিউজ্জামান বলেন,
“মূল্যায়ন পদ্ধতিতে মূল্যায়নই আছে, পরীক্ষা নাই।“
পরীক্ষার পুরনো পদ্ধতি
তুলে দেওয়ার পর থেকেই অভিভাবকদের একাংশ এ শিক্ষাক্রম ও নতুন পাঠ্যক্রম নিয়ে সমালোচনা
করে মূল্যায়ন পদ্ধতিতে পরিবর্তন আনার দাবি জানিয়ে আসছেন।
নানামুখী আলোচনার মধ্যে
জানুয়ারিতে শিক্ষামন্ত্রী মহিবুল হাসা
চৌধুরী নওফেল এনসিটিবিকে
মূল্যায়ন পদ্ধতি পর্যালোচনার আহ্বান জানান।
নতুন শিক্ষাক্রমে তৃতীয়
শ্রেণি পর্যন্ত কোনো পরীক্ষা না রাখা, এসএসসির আগে পাবলিক পরীক্ষা না নেওয়া, নবম-দশম
শ্রেণিতে বিভাগভিত্তিক বিভাজন তুলে দেওয়াসহ একগুচ্ছ পরিবর্তন আনা হয়েছে।
চাপ কমাতে বছর শেষে সামষ্টিক
মূল্যায়নের আগে শিক্ষাবর্ষ জুড়ে চলে শিখনকালীন মূল্যায়ন। বেশ কিছু বিষয়ে শিখনকালীন
মূল্যায়ন হয় শতভাগ।
শিক্ষা মন্ত্রণালয় বলছে,
পরীক্ষা ও মুখস্ত নির্ভরতা থেকে বেরিয়ে এসে অভিজ্ঞতাভিত্তিক শেখার মাধ্যমে নতুন শিক্ষাক্রমে
পাঠ প্রক্রিয়া হয়েছে আনন্দময়।
নতুন শিক্ষাক্রমের মূল্যায়ন
ও পরীক্ষা পদ্ধতির বিষয়ে এনসিটিবির সদস্য (শিক্ষাক্রম) অধ্যাপক মশিউজ্জামান বলেন, “পুরনো
পদ্ধতির পরীক্ষা, যেটা প্রশ্ন ছাপিয়ে পরীক্ষার হলে বসে ঘণ্টা বাজলে লিখবে; সেই পরীক্ষা
কোনো অবস্থাতেই ফিরে আসবে না। প্রয়োজনে এই কারিকুলাম বাদ দিয়ে যদি পুরনো কারিকুলামে
গিয়ে করে, তাহলে সেটা হতে পারে। এই কারিকুলাম থাকতে সেই পরীক্ষা হবে না।”
মূল্যায়ন নিয়ে অভিভাবকদের
উদ্বেগের বিষয়ে জাতীয় শিক্ষাক্রম উন্নয়ন ও পরিমার্জন কোর কমিটির সদস্য তারিক আহসান
বলছেন, পরীক্ষা না হলেও শিখনকালীন ও সামষ্টিক মূল্যায়ন আছে এ শিক্ষাক্রমে।
“পরীক্ষার উদ্দেশ্য তো
আসলে শিখন যাচাই। সেই শিখন যাচাই করা হচ্ছে নানা ম্যাকানিজমের মাধ্যমে। আগে শুধু লিখিত
পরীক্ষা হত। আমরা যেটাকে পরীক্ষা বলি, এরকম কোন মূল্যায়নে নতুন কারিকুলামে নাই।”
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা
ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের এই অধ্যাপক বলেন, “পাবলিক অ্যাসিসমেন্টের ডিজাইনটা কী হবে-তা
নিয়ে আমরা আলোচনা করেছি। এই কারিকুলামে যে পাবলিক পরীক্ষা হবে, সেখানে মাল্টিপল স্ট্র্যাটেজি
অ্যাপ্লাই করা হবে। সেখানেও লিখিত অংশ, প্রেজেন্টেশন, গ্রুপ ওয়ার্ক থাকবে। নানা ধরনের
কৌশলের সম্মিলন থাকবে।
“জিপিএ-৫ থাকবে না। নৈপুণ্য
অ্যাপ নিয়ে মূল্যায়ন করা হবে। এখানে ৭ পয়েন্টের স্কেল আছে। নৈপুণ্য অ্যাপে কিছু নতুন
ফিচার যোগ করা, ডেটা অ্যানালাইসিসের কিছু মেকানিজম অ্যাড করা যায় কি না, এআই সাপোর্ট
নেওয়া যায় কি না- সে বিষয়ে আমাদের আলোচনা হয়েছে।”
মূল্যায়ন পদ্ধতি নিয়ে অভিভাবকদের
সমালোচনার বিষয়ে অধ্যাপক মশিউজ্জামান বলছেন, শিক্ষা কোনো অভিভাবকের দাবির বিষয় নয়।
“যারা কোচিং চালাতে চায়,
গাইড বই বিক্রি করতে চায়, তারা এসব প্রচারণা চালাচ্ছে। ব্যবসায়িক উদ্দেশ্যে এবং অভিভাবকদের
দ্বিধায় ফেলতেই তারা এটা করছে।”
তবে এ পদ্ধতিতে কোনো সমস্যা
হচ্ছে কি না, সেটি বার বার মূল্যায়ন করা হচ্ছে বলে জানান এনসিটিবির এই সদস্য।
তিনি বলেন, “আমরা মূল্যায়নটাকে
নিয়ে বলেছি, প্রতিনিয়ত আমরা টেস্ট করছি, সেই হিসেবে কাজ করছি। আমরা আমাদের কর্মকর্তাদের
দেশের বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে পাঠিয়েছি, শিক্ষক শিক্ষার্থীদের সঙ্গে কথা বলতে। তাদের
কী সমস্যা হয়েছে- কীভাবে সমাধান হতে পারে, সেই অনুযায়ী কারিকুলাম রিভাইস করছি।”
২০২৩ সালের তিন দিনব্যাপী
সামষ্টিক মূল্যায়নের প্রসঙ্গ টেনে তিনি বলেন, “প্রথম দিন তারা অরিয়েন্টেশন পেয়েছে।
দ্বিতীয় দিনে ওগুলোকে প্রসেস করেছে, তৃতীয় দিনে ওগুলোর প্রেজেন্টেশন করেছে। এটা আগেও
ছিল। এখনও তাই আছে। আমরা বলেছি যে, কোথায় কী সমস্যা হচ্ছে, শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের কী
সমস্যা হচ্ছে, এগুলো আমরা মূল্যায়ন করেছি। ওরা এক দিনে মূল্যায়ন করতে পারলে ভালো হবে
বলে জানিয়েছে। এখন একেকটি বিষয় এক দিনব্যাপী হবে এবং দিনব্যাপী কাজটি শেষ করে তারা
বের হবে।”
বছর শেষে ছয়টি পিরিয়ডের
মধ্যেই মূল্যায়ন করার চেষ্টার কথা তুলে ধরে অধ্যাপক মশিউজ্জামান বলেন, “অভিভাবক, শিক্ষক,
শিক্ষার্থীরা বলেছে এতে তাদের সমস্যা হচ্ছে। পরে আমরা দুটো পিরিয়ডে একটি সাবজেক্ট করে
দিয়েছিলাম। তিনটা বিষয় করা তাদের জন্য কঠিন। তাই আমরা একটি করে মূল্যায়ন নিতে চাচ্ছি।
আগেও শিক্ষার্থীরা লিখত, অ্যাসাইনমেন্ট লিখত। এখনও তাই হবে।”